শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ পূর্বাহ্ন
নবীনগর প্রতিনিধিঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলা কাইতলা দক্ষিন ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে (পূর্ব পাড়া) শশুর বাড়িতে আজু মিয়া গতকাল ( ১৭ মে) শুক্রবার দুপুরে মারা গিয়েছেন।
সূত্রে জানা যায়, আজু মিয়ার বাড়ি কাইতলা উত্তর পাড়ায়। তিনি একই গ্রামের পূর্ব পাড়ার মরহুম আফিল উদ্দিন ভূঁইয়ার ছোট মেয়ে সোহেদাকে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে করে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। কিন্তু বিবাহের পর থেকেই তাঁর স্ত্রী সোহেদার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পরেছেন। তাকে প্রায়ই শাররিক ও মানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হত। মান সম্মানের কথা চিন্তা করে নিরবে সব অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে গিয়েছেন আজু মিয়া । পরবর্তিতে তাদের একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। যার নাম রাখা হয় আজাহার। তখন আজু মিয়া ভেবেছিলেন, ছেলের কথা চিন্তা করে হয়তো (স্ত্রী) সোহেদা ভাল হয়ে যাবে। কিন্তু আজু মিয়ার ভাবনা ভাবনাই রয়ে গেল।
আজু মিয়া বেডিংয়ের দোকানে কারিগরের চাকরি করতেন। পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকার রামপুরা টিভি সেন্টারের সামনে নিজেই বেডিংয়ের দোকান দেন। যার নাম দিয়েছিল একমাত্র ছেলে আজাহারের নাম অনুসারে (আজাহার বেডিং ষ্টোর)। পরে বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রী এবং ছেলেকে রামপুরায় নিয়ে আসেন। তখন থেকে আজু মিয়ার জীবনে নেমে আসল অন্ধকার।
আজু মিয়ার বেডিংয়ের দোকানে কাজ করত তারই গ্রামের সম্পর্কের এক ভাতিজা সেন্টু। সে প্রায়ই বাসায় আসা যাওয়া করত। একপর্যায়ে সোহেদা সেন্টুকে ধর্ম ছেলে বানিয়ে তাকে বাসায় থাকার সুযোগ করে দেয়। তাতে আজু মিয়া রাজি ছিলনা। এই নিয়ে সংসারে সারাক্ষন ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকত। শান্তির আশায় এবং ছেলে আজাহারের কথা ভেবে আজু মিয়া তখন সেন্টুকে তার বাসায় আশ্রয় দেন।
সেন্টুর সাথে গোপন জোগসাজস রেখে সোহেদা দোকান থেকে বিভিন্ন ভাবে টাকা পয়সা চুরি করে হাতিয়ে নেয়। দোকানে লোকসান গুনতে গুনতে আজু মিয়া হাপিয়ে পরেন । এই দিকে বালিশ তৈরির তোলা, কাপড় দেওয়া বিভিন্ন পার্টির টাকা জমতে থাকে । স্বাভাবিক ভাবে ঋণগ্রস্থ হয়ে পরে আজু মিয়া । পাওনাদারের টাকা পরিশোধ করতে দোকান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। তখন থেকে আজু মিয়া আশ্রয় নেন তাঁর শশুর বাড়িতে। পরবর্তিতে কয়েকবার পুনরায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেছিলেন। এরই মধ্যে ছেলে আজাহার বড় হয়ে যান এবং বিবাহ করেন । কিন্তু আজু মিয়ার ছেলে আজাহার এবং স্ত্রী সোহেদারের অত্যাচারে বেশিদিন সংসার করতে পারেননি ছেলের বউ। এমনি করে আজাহার ৩টি বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী রামপুরা থানায় আজাহারের বিরুদ্ধে গত ২০১৮ সালের প্রথম রমজানে একটি মামলাও করেছেন। সে মামলায় আজাহার গ্রেফতারও হয়েছে।
কিন্তু আজু মিয়া এইসব পছন্দ করতেন না। ছেলে আজাহার এবং স্ত্রী সোহেদাকে খারাপ কিছু না করে ভাল কাজ করতে সব সময়ই বলতেন। তাতে ছেলে এবং স্ত্রী মিলে আজু মিয়াকে প্রায়ই শাররীক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করত। এরই ধারাবাহিকতায় ছেলে এবং নিজ স্ত্রীর মার সহ্য করতে না পেরে আজু মিয়া গত ২৯ এপ্রিল শশুর বাড়িতে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করিলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথেও ছেলে আজাহার তার বাবা আজু মিয়াকে মারতে থাকে। এ নিয়ে গ্রামের মানুষের মুখে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়। সাময়িকভাবে হাসপাতাল থেকে আজু মিয়া কিছুটা সুস্থ হয়ে আসলেও শেষ রক্ষা আর হল না। জানা যায়, গতকাল শুক্রবার দুপুরে (১৭ মে ২০১৯) আজু মিয়া চিরজীবনের জন্য চলে যান না ফেরার দেশে। আজু মিয়ার মারা যাওয়াকে নিয়ে গ্রামের মানুষের মনে নানা জল্পনা কল্পনা ও প্রশ্ন শুরু হয়েছে। অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন আজু মিয়াকে সোহেদা ও তার ছেলে মেরে ফেলেছেন কিনা?